আল্লাহ্র
অস্তিত্ব: একটি
বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ
জাভেদ আহমদ
[ভূমিকা:
এই লেখার মূল রচনাকাল ১৯৮৫ সাল; এখন ২০১২ সাল চলছে। কিছু পুরনো
কাগজ-পত্রের মধ্য
থেকে বেরিয়ে এলো ২৭ বছর
আগের এই লেখাটি।
ভাবলাম, লেখাটা
কম্পিউটারে তুলে
ফেলি। লেখাটি যেমন
ছিল তেমনি রেখে
দিলাম। এর প্রায়
১০ বছর পর ১৯৯৫
সালে আমি নিউ ইয়র্কে
বসে “Faith,
Logic and the Truth” লেখাটি
লিখেছিলাম এরই
বিষয় বস্তু থেকে,
যা আমি আজও অনুসন্ধান
করে চলেছি। লেখার
শেষে উপসংহারটি
পরে সংযোজিত।]
একবার এক নাস্তিকের সাথে বিতর্ক হয়েছিল আমার আল্লাহ্র অস্তিত্ব নিয়ে। মূলত স্বয়ম্ভূ সৃষ্টিশীলতার যুক্তি দেখিয়ে সে আমাকে বোঝাতে ছেয়েছিল যে আদতে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। তার যুক্তি ছিল - "নীহারিকা থেকে সৃষ্ট ছায়াপথের,
এবং এই ছায়াপথের একটি অংশ আমাদের সৌরজগৎ;
আর এই জগতের গ্রহগুলো তৈরি হয়েছে সূর্য থেকে। অর্থাৎ, পৃথিবীর আবির্ভাব সূর্য থেকে,
পৃথিবীতে বিভিন্ন জৈবিক বিক্রিয়ার ফলে
জীব ও জীবের ক্রমপরিবর্তনে বিভিন্ন প্রজাতি ও মানুষের উদ্ভব ঘটে।" আমি তাকে প্রশ্ন করলাম,
"বেশ! যদি
তাই হবে, তো ঐ নীহারিকা সৃষ্টি করল কে? নিশ্চয়ই আল্লাহ্?" অতঃপর সে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করল, "আর আল্লাহ্কে সৃষ্টি করল কে?" তখন আমি
তাকে আল্লাহ্র আদি
অনন্ত ও অসীমতার কথা
বললাম। সে আমার কথা সহজেই উড়িয়ে দিল কেননা
এর বেশি আর বিশ্লেষণ করা
তখন আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। পরিশেষে এই বলেই শেষ করেছিলাম - "বিশ্বাসে মিলায় সর্গ,
তর্কে বহুদূর।"
সেদিন যেখানে থেমে গিয়েছিলাম আজকে তার পর থেকে শুরু করতে চাই। পাক কোরআন মজিদে আল্লাহতালার অনেকগুলি পবিত্রতম গুণবাচক নামের উল্লেখ আছে। কোরআন
এবং হাদিস শরীফে ৯৯ টি নামের কথা
আছে। আমরা মূলত আল্লাহতালার বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাই এই সকল গুণবাচক নাম থেকেই। কার্যত এসব নাম থাকা সত্ত্বেও প্রভুকে পরিপূর্ণভাবে চেনা দুঃসাধ্য ব্যাপার এবং
এ কারণেই পবিত্র কোরআনে বার বার উল্লেখ আছে আমরা যেন আমাদের জ্ঞান সাধনার বাইরে
কোন কিছু নিয়ে চিন্তা ভাবনা
না করি। তথাপিও
আমাদের আলোচনার
প্রয়োজনে আমরা
প্রভুর কয়েকটি
গুণবাচক নামের
অর্থ নিয়ে আলোচনা
করবো।
আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান,
অদ্বিতীয়, আদি,
অনন্ত, অসীম, সৃজন-কারী,
মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ,
পুনরুত্থাঙ্কারি,
জ্যোতি, ইত্যাদি।
উপরুল্লেখিত বৈশিষ্ট্য
গুলো থেকেই বোঝা
যায় আল্লাহ্ একপ্রকার
শক্তি, যার কোন
আকার আকৃতি নেই।
তিনি চিরঞ্জীব
এবং সর্বত্র বিরাজমান
একক সত্তা। এবার
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ
থেকে এসব বৈশিষ্ট্য
নিয়ে পর্যালোচনা
করা যাক।
বৈজ্ঞানিক
সংজ্ঞায় কাজ করার
সামর্থ্যকে শক্তি
বলে। আলো, গতি, তাপ,
শব্দ, বিদ্যুৎ,
বিকিরণ, আনবিকতা,
চার্জ ইত্যাদি
শক্তির বিভিন্ন
বহিঃপ্রকাশ। শক্তি
অপরিমেয়, মাত্রাহীন
এবং ওজনহীন একটি
সত্ত্বা যা সর্বত্র
বিরাজমান। শক্তি
নিত্য, অর্থাৎ
এর সৃষ্টি বা ধ্বংস
কোনটাই হতে পারেনা;
তবে বিভিন্নভাবে
আত্মপ্রকাশ করতে
পারে। মূলত আমরা
যত কিছুর অস্তিত্বের
কথা জানি, সবই ঐ
শক্তির বিভিন্ন
রূপ মাত্র।
আধুনিক বিজ্ঞান
গ্রহণ করতে বাধ্য
হয়েছে যে সুদূরের
ঐ নক্ষত্রের সৃষ্টি
থেকে আরম্ভ করে
জীবনের উৎপত্তি
পর্যন্ত সবই শক্তির
ক্রম পরিবর্তনের
বিভিন্ন রূপ বৈ
আর কিছুই নয়; এবং
আমরা যে আণবিক
শক্তি বিক্রিয়ার
কথা বলে থাকি, সেই
প্রক্রিয়া চলছে
ঐ সব নক্ষত্রগুলোতে
বহু পূর্ব থেকেই।
বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন
শক্তি, ভর এবং আলোর
গতির বর্গের গুণিতকের
সমান (E = mc2 ); সমীকরণটি
দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন
যে বস্তু আসলে
শক্তির ঘনীভূত
অবস্থা এবং বস্তু
থেকে শক্তি এবং
শক্তি থেকে বস্তুর
পরিবর্তন সম্ভব।
১৯২৮ সালে বৈজ্ঞানিক
পল
ডিরাক এক নতুন
ধারনার জন্ম দেন
- তিনি দেখান যে
প্রকৃতিতে অবস্থিত
প্রত্যেক বস্তুকণার
একটি সমপরিমাণ
বিপরীত সত্ত্বাও
বিরাজমান। উদাহরণ
স্বরূপ বলা যেতে
পারে ইলেকট্রন
কণার কথা যার বিপরীত
কণা হচ্ছে ধনাত্মক
ইলেকট্রন বা যাকে
বলা হয় পজিট্রন।
এবং এই দুই কণার
জোড় যখন একীভূত
করা হয় তখন উভয়
কণাই পরিবর্তিত
রূপ আকারে শক্তির
বিকিরণ ঘটিয়ে অদৃশ্য
হয়ে যায়। অনুরূপভাবে,
ঐ বিকিরণ থেকেও
উক্ত কণা দ্বয়ের
আবির্ভাব ঘটানো
সম্ভব।
উপরের আলোচনা
থেকে আমরা দেখতে
পারছি যে সব কিছুর
উৎসই হচ্ছে “শক্তি”। শক্তি
সম্পর্কে এটাই
আমাদের বর্তমান
ধারণা যা এখনও
অনেকখানি অস্বচ্ছ।
তাহলে আমরা আল্লাহ্র
নামের অর্থের সাথে
সঙ্গতি রেখে বলতে
পারি - শক্তি অদ্বিতীয়,
অবিনশ্বর, নিরাকার,
আদি, অনন্ত, অসীম,
জ্যোতি, ইত্যাদি।
আল্লাহ্র বেশ
কটি উল্লেখযোগ্য
গুণাবলীর মিল আমরা
শক্তির মধ্যে দেখতে
পাই আমাদের এ পর্যন্ত
আহরিত স্বল্প জ্ঞানেই।
কিন্তু, এই শক্তির
নিজ থেকে কোন কিছু
করার ক্ষমতা নেই।
এই শক্তিকে যিনি
আদেশ এবং পরিচালনা
করেন সৃজনশীল ভাবে,
তিনিই তো আল্লাহ্!
পরিপূর্ণ জ্ঞানই
সত্যের দ্বার উন্মোচন
করে। যতদিন পর্যন্ত
বিজ্ঞান আস্তিকতার
পূর্ণ সন্ধান না
পাচ্ছে, ততদিন
বিজ্ঞানের যাত্রা
চলবে। বিজ্ঞান
ধীরে ধীরে আমাদের
সে সত্যে নিয়ে
যাচ্ছে, যেটার
সন্ধান আমরা বহু
আগেই পেয়েছি। সেই
সত্যই হল ইসলাম
ধর্ম। ইসলাম ধর্মের
সত্যতা প্রতিষ্ঠাই
হবে বিজ্ঞানের
সর্বশেষ স্তর;
অর্থাৎ, বিজ্ঞানের
দৌড় আদ্ধাতিকত্তেই
শেষ হবে। প্রভু
সবকিছু সৃষ্টি
করে ছেড়ে দিয়েছেন
আমাদের হাতে, আর
আমরা সেসব নাড়াচাড়া
করে গবেষণা করছি
তাকেই (সৃষ্টিকর্তাকে)
চেনার জন্য। শক্তির
নিত্যতা সূত্র
(Law
of conservation of energy) আজ বিজ্ঞানের
একটি সুপ্রতিষ্ঠিত
সিদ্ধান্ত। এই
সূত্রই এখন অনন্ত-অসীম
শক্তি আল্লাহতালার
আদি ও অনন্ত অস্তিত্বের
ভিত্তি বা সম্ভাব্যতা
আমাদের বুঝিয়ে
দেয়।
প্রফেসর
হোয়াইটহেড তাই
বলেন, “বিজ্ঞান
যে পর্যন্ত কার্য কারণ
সম্বন্ধকে নীতি
হিসেবে গ্রহণ করে
ও এর ওপর গুরুত্ব
আরোপ করে এবং তদনুযায়ী
এই সিদ্ধান্ত
পোষণ
করে যে এই দৃশ্যমান
বিশ্বভ্রম্মান্দ
স্বয়ম্ভু হতে পারেনা,
সে পর্যন্ত এটা
নিশ্চিত সত্য যে
বিজ্ঞান আমাদেরকে
এক অদৃশ্য কারণ
সত্তার দিকেই চালিত
করছে। যদি এই কারণ
সত্ত্বাকেই আমরা
সৃষ্টিকর্তা বা
আল্লাহ্ বলি তাহলে
বিজ্ঞান নাস্তিকতাকে
অচল ও অসম্ভব করে
দিয়েছে।“ অতঃপর, এই সম্বন্ধে
ইঙ্গিত দিতে গিয়েই
আইনস্টাইন
বলেছিলেন, “ধর্মহীন
বিজ্ঞান খোঁড়া
এবং বিজ্ঞানহীন
ধর্ম অন্ধ।“
উপসংহার:
এ পর্যন্তই ছিল
লেখাটি। বিজ্ঞান আজ
আর শুধু যুক্তিতর্কের
মধ্যে সীমিত নেই। ইতিমধ্যে প্রায়
তিন দশক পার হয়ে
গেছে। এরই
মধ্যে বিজ্ঞানেরও
অনেক জ্ঞান সঞ্চার
হয়েছে। আজ বিজ্ঞানীরা
“বুদ্ধিমান
নকশা” (Intelligent
Design) এর আলোকে
স্বীকার করছেন যে
একজন বুদ্ধিমান
সৃষ্টিকর্তা ছাড়া
কোন কিছু সৃষ্টি
সম্ভব নয়। অতএব, তারা আর ডারউইনের
অভিব্যক্তিবাদ
(Theory
of evolution) মানেন
না।
সৃষ্টির
সেই গুড় কণা থেকে
শুরু করে বৃহৎ
আয়োজন সবটি যেন
একই মন্ত্রে
গাঁথা। প্রকৃতির
সব জায়গায় ফিবনাচি
নম্বর (Fibonacci
Number) এবং স্বর্ণনির্মিত
অনুপাত (Golden Ratio)
এর ব্যবহার
দেখতে পাওয়া যায়।
এতসব প্রমাণাদি
এবং বিশ্লেষণ সত্ত্বেও
শয়তান এবং তার
অনুসারীরা আপ্রাণ
চেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছে ভুল মতবাদগুলোর
প্রচার চালিয়ে
যেতে। আমাদের
উচিত হবে সঙ্ঘবদ্ধ
ভাবে মিথ্যার বিরুদ্ধাচরণ
করে তার অগ্রাশন
প্রতিরোধ করা। তাহলেই শয়তান
সম্পূর্ণ ভাবে
পরাজিত হবে।
লিঙ্ক এবং রেফারেন্স:
99
Names (Attributes) of Allah: http://en.wikipedia.org/wiki/Names_of_God_in_Islam
Intelligent
Design dot Org: http://www.intelligentdesign.org/
The
Signs of God's Existence - Documentary [Full Length]: https://www.youtube.com/watch?v=ZS1x-6al2pE
Alfred
Russel Wallace’s Theory of Intelligent Evolution: http://www.alfredwallace.org/
Mysteries
of Mecca : Golden Ratio 1.618 (Full Version): https://www.youtube.com/watch?v=loeFN3VHCWc&feature=related
A
Brain Cell is the Same as the Universe: http://www.newsforage.com/2012/04/brain-cell-is-same-as-universe.html